ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

মানসিক ক্ষতি শিশুদের, অর্থের ক্ষতি অভিভাবকদের

জেলায় কেজি স্কুলগুলোতে শিশুদের বইয়ের বোঝা বাড়াচ্ছে

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::

কক্সবাজারের প্রায় ৫ শতাধিক কেজি স্কুল শিক্ষার্থীদের বইয়ের বোঝা বাড়াচ্ছে। অপ্রয়োজনীয় বই দিয়ে একদিকে শিশুদের মানসিক চাপ সৃষ্টি অন্যদিকে বাড়তি টাকা খরচ হচ্ছে বলে মনে করেন সচেতন মহল। তবে বিশেষ কিছু অভিবাবকদের অজ্ঞতার কারণে কেজি স্কুল গুলো বইয়ের ব্যবসা করতে পারছে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা। একই সাথে সরকারের সুনির্দিষ্ট কোন গাইডলাইন না থাকার ফলে শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য হচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

শহরের লাইব্রেরী গুলোতে এখন বই বেচাকেনার ধুম পড়েছে। শহরের প্রধান সড়ক এবং রক্ষিত মার্কেট সহ বেশ কিছু লাইব্রেরীতে গিয়ে দেখা গেছে, বেশির ভাগ অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা গাইড এবং কেজি স্কুল গুলোর বেধে দেওয়া কিছু বই কিনছে।

আলাপকালে শহরের ঘোনারপাড়ার রাজিব দাশ নামের একজন জানান, আমার ২ ছেলে তারা ৫ম এবং ২য় শ্রেনীতে পড়ে। গোলদিঘির পাড় এলাকার একটি কেজি স্কুলে পড়ে। সেখান থেকে বোর্ড বই দিয়েছে। এখন ৫ম শ্রেণীর গাইড এবং ২য় শ্রেনীর জন্য স্কুলের দেওয়া কিছু বাড়তি বই কিনেছি।
তার কথামত রক্ষিত মার্কেটের রহমানিয়া লাইব্রেরীতে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে পূর্ব থেকেই বাধা আছে সেই স্কুলের বই। নাম বলাতে সাথে সাথে ৭ টি বই দিয়ে ৩৮০ টাকা দাম নিল।

এ সময় রহমানিয়া লাইব্রেরীর মালিক নুরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শহরের প্রায় কেজি স্কুল গুলোর বই আমাদের লাইব্রেরীতে পাওয়া যায়। স্কুলগুলো প্রকাশনা সংস্থার সাথে চুক্তি করে বই ছাপিয়েছে। সে অনুযায়ী আমাদের দাম ঠিক করে দিয়েছে, আমরা বিক্রি করছি। এখানে আমাদের সামান্য লাভ হবে। তিনি বলেন, শুধু আমি নই অনেক লাইব্রেরীতে এভাবে কেজি স্কুলের বই বিক্রি হয়।

এ সময় আরেকজন ক্রেতা খুরুশকুলের ব্যবসায়ি আবছার উদ্দিন বলেন, আমিও কেজি স্কুলের বই কিনতে এসেছি। তিনি বলেন, আমার মত শত শত মানুষ আজকে বই কিনতে আসবে কারণ স্কুল থেকে ঠিক করে দেয়া নির্দিষ্ট লাইব্রেরী থেকে বই আজকের মধ্যে নিতে বলেছে।
সেই অভিভাবক বলেন, যেহেতু ছেলেমেয়ে পড়ে তাই স্কুলের নাম দেওয়াটা ঠিক হবে না, তবে আমার মতে সরকার যেখানে ৩ টি বই বোর্ড নির্ধারণ করে দিয়েছে সেখানে নতুন করে আরো ৬ টি বই কিভাবে স্কুল থেকে দেয় আমি বুঝিনা। তবে যেহেতু তারা মা‘দের আগে ম্যানেজ করে ফেলে তাই আমরা কিছু করতে পারিনা।

ঝিলংজা মহুরী পাড়া থেকে আসা আসমাউল হুসনা বলেন, আমি সহ ৩ জন প্রতিবেশী কেজি স্কুলের বই, গাইড বই কিনতে এসেছি। তাদের দাবী সরকারি স্কুল আমাদের থেকে অনেক দূরে আর সেখানে ভাল লেখাপড়া হয়না তাই বাচ্চাদের কেজি স্কুলে দিয়েছে। যদি সরকারি স্কুল গুলোতে ভালমানের লেখাপড়া হতো তাহলে কেন আমরা এতটাকা খরচ করে কেজি স্কুলে দিতাম। তাই আগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মান ঠিক করার জন্য দাবী জানান তারা।

এ ব্যপারে কক্সবাজার সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নুরুল আমিন বলেন, বর্তমানে সমস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন আধুনিক, পরিবেশ অনেক উন্নতমানের, শিক্ষকরা সবাই অনার্স মাস্টার্স করা। কিন্ত কেজি স্কুল গুলোতে এসএসসি এইচএসসি পাস করেই শিক্ষক হচ্ছে। বসার ঠিক নাই, পরিবেশ নাই। কিন্তু চাকচিক্য বেশি, অনেক অভিভাবক তাদের ছেলেমেয়ে মাথায় ক্যাপ, বুকে টাই ঝুলিয়ে স্কুলে যাওয়াটাকে গৌরবের মনে করে। আবার কিছু আছে পারিবারিকভাবে কেজি স্কুল খুলে বসে আছে তারা সেটাকে ব্যবসা হিসাবে নিয়েছে। তবে আমি মনে করি বোর্ড বাইয়ের বাইরে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বাড়তি চাপ দেওয়াটা কোন ভাবেই উচিত নয়। এতে শিশুদের মেধা মননে ক্ষতি হয়।

এ ব্যপারে সুজন জেলা কমিটির সহ সভাপতি ও উখিয়া কলেজের অধ্যক্ষ অজিত দাশ বলেন, জাতীয় শিক্ষাবিদরা অনেক গবেষনা করে, শিশুদের জন্য উপযোগি করে বই প্রস্তুত করেছে। সেখানে কেজি স্কুল গুলো আরো দ্বিগুণ বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া কোন ভাবেই কাম্য নয়। তাছাড়া আমরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে আজকে অধ্যক্ষ হয়েছি। আসলে কিছু অভিবাবকের অজ্ঞতার কারণে অল্প বয়সে শিশুদের মানসিক ভাবে অনেক ক্ষতি হচ্ছে।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও বর্তমান উত্তরণ মডেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর একেএম ফজলুল করিম চৌধুরী বলেন, কিছু শিক্ষা ব্যবসায়ি এবং অভিভাবকদের অজ্ঞতার কারণে শিশুরা গড়ে উঠার আগেই ঝরে পড়ে। মানসিক চাপে অনেক শিশু বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়ে, পরে তারা আর ভাল করে লেখাপড়া করতে পারেনা। শিশুদের এভাবে বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া উচিত না। এবিষয়ে অভিবাবকদের সচেতনতা বেশি দরকার। একই সাথে সরকারের একটি গাইড লাইন করে দেওয়া দরকার।

পাঠকের মতামত: